ইতালিতে ভারতীয় শ্রমিককে জখম করার অপরাধে পিতা-পুত্রকে আটক করেছে পুলিশ

মিলান বার্তা ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:৫৫:১৪,অপরাহ্ন ২০ মে ২০২০ | সংবাদটি ১৩৫৫ বার পঠিতইতালিতে ভারতীয় শ্রমিককে জখম করার অপরাধে পিতা-পুত্রকে আটক করেছে পুলিশ।
প্রবাস ডেস্ক –
ফসলের মাঠে কাজ করার সময় সেফটি মাস্ক এবং হ্যান্ড গ্লাভস চাওয়ার পাশাপাশি বকেয়া বেতন পরিশোধের জন্য চাপ দেয়াতে ইতালিয়ান এক নিকৃষ্ট মালিক পিতা-পুত্র তাঁদের অধীনস্থ ভারতীয় শ্রমিককে মেরে মারাত্মকভাবে জখম করে খালে ফেলে দিয়েছে। চরম নিন্দনীয় এই ঘটনা ঘটেছে গেলো উইকেন্ডে রাজধানী রোম থেকে মাত্র ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে লাতিনা পৌর এলাকায়। অপরাধী পিতা-পুত্রকে আটক করেছে ইতালীয় পুলিশ। কৃষিমন্ত্রী তেরেসা বেল্লানোভা ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
ইতালির বিশাল কৃষিক্ষেত্রে বছরের পর বছর ধরে চলে আসা শ্রমিক শোষণ নির্যাতনের সর্বশেষ এপিসোড এটি। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, শোষক মালিক মাত্র ৪ ইউরো ঘন্টায় সাপ্তাহিক কোন ছুটি ছাড়াই প্রতিদিন ১২ ঘন্টা করে শ্রমিক খাটিয়ে আসছিলো বেশ আগে থেকেই। অসুস্থতা জনিত কোন প্রকার ছুটির কোন সুযোগ রাখেনি প্রতারক মালিক। গিনিপিগ বানিয়ে রাখা শ্রমিকদের যতো ঘন্টা কাজ করাতো তার মাত্র এক তৃতীয়াংশ উল্লেখ করা হতো স্যালারি স্লিপে।
নেক্কারজনক ঘটনার দিন ৩৩ বছর বয়সী ভারতীয় শ্রমিক (আইনী কারণে নাম প্রকাশ করা হয়নি) মাঠে কাজ করার সময় মাস্ক সহ প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী চাইলে মালিক ক্ষিপ্ত হয়ে প্রথমে তাঁকে চাকুরীচ্যুত করে। এ পর্যায়ে বকেয়া বেতন দাবি করলে ৫২ বছর বয়সী মালিক ২২ বছর বয়সী পুত্রকে সাথে নিয়ে চড়াও হয় খেটে খাওয়া ঐ শ্রমিকের উপর। দুইজন মিলে ইচ্ছেমতো কিল-ঘুষি মেরে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে একপর্যায়ে পাশের একটি খালে ফেলে রাখে আহত অভিবাসীকে।
মাথায় মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত ভারতীয় শ্রমিককে উদ্ধার করে নিকটবর্তী তেররাচিনা হাসপাতাল ভর্তি করা হয়। পরে ঐ খামারে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করলে শ্রমিকদের উপর দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সিস্টেমিক শোষণ নির্যাতনের আদ্যোপান্ত বেরিয়ে আসে। খামারে গিয়ে পুলিশ দেখতে পায় শ্রমিকদের সবাই বিদেশি এবং কাউকেই মাস্ক সহ কোন সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ করা হয়নি। নির্যাতনকারী মালিক পিতাকে গৃহবন্দী রাখা হলেও কুলাংগার পুত্রকে কোর্টে চালান দেয়া হয়েছে সংগঠিত অপরাধের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে।
কৃষিমন্ত্রী তেরেসা বেল্লানোভা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,”এখন আমি আরও নিশ্চিত এ কারনে যে, দেশজুড়ে কৃষিখামার সমূহে সকল শ্রমিকদের বৈধ করতে আমি যে যুদ্ধ চালিয়েছি তা সঠিক ছিলো। সেফটি মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস পাওয়ার পাশাপাশি ভাইরাস থেকে নিরাপদে থাকা প্রত্যেক শ্রমিকের অধিকার। শোষকশ্রেণীর অপকর্মের খেসারতে হাজার হাজার শোষিত নারী পুরুষ লোকচক্ষুর অন্তরালেই থেকে যায় এদেশে। আমি অত্যন্ত গর্বিত কারণ রাষ্ট্র এবার উদ্যোগ নিয়েছে ফসলের মাঠে সবার অধিকার ফিরিয়ে দিতে”।
◾ মাঈনুল ইসলাম নাসিম ◾
(ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক / অভিবাসন পরামর্শক)
Photo Courtesy : Il Riformista / Il Messaggero / Hon. Minister for Agriculture, Food and Forestry Policy Ms. Teresa Bellanova / Il Fatto Quotidiano