সিলেটের শিশুরা নতুন বইয়ের ঘ্রাণে মাতোয়ারা

মিলান বার্তা ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:২৬:১৬,অপরাহ্ন ০১ জানুয়ারি ২০২১ | সংবাদটি ২৫৫ বার পঠিতকরোনাভাইরাসের কারণে সিলেটে এবার বই উৎসব হয়নি। উৎসব না হলেও সংক্রামণ এড়াতে এবার ব্যতিক্রমীভাবে শুক্রবার সকালে বই বিতরণ করা হয় সিলেটের স্কুলগুলোতে। ওইদিন বেলা ১২টার মধ্যেই বই বিতরণ শেষ হয়। শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের পৃথক শ্রেণি কক্ষে বই বিতরণ করেন শিক্ষকরা। তবে তা স্বাস্থ্যবিধি মেনে। উৎসব না হলেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা গেছে আনন্দের ছাপ।
নতুন বছরের প্রথম দিনে শীতকে উপেক্ষা করে সিলেটের স্কুলগুলোতে উপস্থিত হয় প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা। স্কুলের শিক্ষকরা একে একে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই বিতরণ করার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অনেকদিন পর তাদের সাথে খোশগল্পে মেতে উঠেন শিক্ষক-শিক্ষিকা। করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষার্থী স্বাস্থ্যের প্রতি আরও বেশী সচেত হয়ে উঠেন। স্কুলে বই নিতে আসা খুদে শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে দেখা গেছে।
আখালিয়ায় সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, করোনাভাইরাসের প্রভাব যাতে শিক্ষার্থীদের উপর না পড়ে সেজন্য এবার তারা স্কুল থেকে বই সংগ্রহ করার জন্য অভিভাবকদের আমন্ত্রণ জানান। স্বাস্থ্যবিধি মেনে অধিকাংশ অভিভাবক স্কুল থেকে বই সংগ্রহ করেন।
তবে সিলেটের অধিকাংশ স্কুলে দেখা গেছে অভিভাবকদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা বই সংগ্রহ করছেন। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় সিলেট নগরীর উমরশাহ তেররতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা যায় বই নেয়ার জন্য প্রায় ১৩জন শিক্ষার্থী স্কুলের বারান্দায় বসে অপেক্ষা করছেন। এসময় কয়েকজন মাঠে খেলা করতে দেখা যায়।
সকালে স্কুলে চলে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে স্কুলের ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী নাজেরা সুলতানার মা জহুরা বেগম জানান, মেয়ে জানে বছরের প্রথম দিন বই পাবে। সেজন্য আগের দিন রাত স্কুলের জামা আলমিরা থেকে বের করে রাখে। সকাল সাড়ে ৭টায় ঘুম থেকে উঠে প্রস্তুত হয়ে তাড়া দিয়ে স্কুল খোলার আগেই আমাকে স্কুলে নিয়ে আসে।
এ বিষয়ে নাজেরা বলেন, আগে আসলে আগে নতুন বই পাবো। গত বছরে গণিতের কাটা-ছেড়া পেয়েছি। তাই এবার ভালো বইয়ের জন্য আগে এসেছি।
সিলেটের জিন্দাবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বই নিতে আসা আব্দুল মোছাব্বির নামের এক অভিভাবক জানান, বই উৎসব না হওয়ায় খুবই ভালো হয়েছে। বই পেয়েছি এখন স্কুল ব্যাগ কিনে বাসা যাব।
সিলেটের শিক্ষা অফিসার নামজিদ খান বলেন, এবার সিলেটে কোন বই উৎসব না হলেও বই নিতে আসা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে উৎসাহ দেখা গেছে। অনেক দিন পর বইয়ের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে আসা শিক্ষার্থীরাও বেশ খুশি। যারা নির্ধারিত সময়ে বই নিতে পারেননি তারা স্কুল থেকে বই সংগ্রহ করতে পারবেন। সিলেটে উৎসব না হলেও উৎসব মুখোর পরিবেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বই বিতরণ করা হয়।
জানা যায়, সিলেটের ১৩ উপজেলায় ২০২১ শিক্ষাবর্ষের প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি, প্রাথমিক স্তর এবং নৃ-গোষ্ঠীর বই বরাদ্দের কথা ছিল ২৬ লাখ ৮ হাজার ৬২৬টি। এই চাহিদার মধ্যেও প্রাপ্ত বইয়ের সংখ্যা ২১ লাখ ৭ হাজার ২৬টি। সেই হিসেব অনুসারে এখনও সিলেটের ১৩ উপজেলায় বইয়ের ঘাটতি রয়েছে ৪ লাখ ৩৮ হাজার ৬০০ বইয়ের। ঘাটতি হওয়া বইগুলোর প্রিন্ট শেষ হলেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দেয়া হবে। এরমধ্যে ৬টি উপজেলায় শতভাগ বই পৌঁছালেও অন্য ৭টি উপজেলায় শতভাগ বই এখনও পৌঁছায়নি। সিলেটের ১৩ উপজেলার মধ্যে দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় বইয়ের ঘাটতি রয়েছে ৭২ হাজার ৬০০। বিশ্বনাথ উপজেলায় বইয়ের ঘাটতি রয়েছে ৫১ হাজার ৭৪০।
বিয়ানীবাজার উপজেলায় বইয়ের ঘাটতি রয়েছে ৬৯ হাজার ৮৫০। জকিগঞ্জ উপেজলায় বইয়ের ঘাটতি রয়েছে ৭৬ হাজার ৬৫০। জৈন্তাপুর উপজেলায় বইয়ের ঘাটতি রয়েছে ৫৮ হাজার ২৩২। গোয়াইনঘাট উপজেলায় বইয়ের ঘাটতি রয়েছে ৯২ হাজার ৫৪৮ এবং কোম্পানীগঞ্জে বইয়ের ঘাটতি রয়েছে ১৬ হাজার ৯৮০।