৯ মাসে মেট্রোরেলের অগ্রগতি ১১ শতাংশ

মিলান বার্তা ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ১:০৭:২৪,অপরাহ্ন ১৫ জানুয়ারি ২০২১ | সংবাদটি ২৪৭ বার পঠিতরাজধানী ঢাকার মেট্রোরেল নির্মাণ কাজে করোনার বিরূপ প্রভাব পড়েছে করোনাভাইরাসের। মহামারিকালের শুরুতে থমকে যায় এর নির্মাণ কাজ। নির্মাণ শ্রমিক, বিদেশি পরামর্শক ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারাও দেশে ফিরে যান। ফলে অনেকটা ভাটা পড়ে নির্মাণ কাজে। করোনার এই দীর্ঘ ৯ মাসে সরকারের অগ্রাধিকার এই প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ১১.৭ শতাংশ। এতে পূর্ব নির্ধারিত সময়ে মেট্রো চলাচল নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রাজধানীর যানজট কমাতে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত উড়ালপথে ২০.১০ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণ করা হচ্ছে। দুই ভাগে ভাগ করে নির্মাণাধীন প্রকল্পটির প্রথম অংশ উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৭৮.৩৮ শতাংশ। আর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশের হয়েছে ৪৯.৪৭ শতাংশ। ইলেক্ট্রনিক ও মেকানিক্যাল সিস্টেম এবং রোলিং স্টক (রেলকোচ) ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ কাজের সমন্বিত অগ্রগতি হয়েছে ৩৪.৮২ শতাংশ। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজের সার্বিক গড় অগ্রগতি হয়েছে ৫৫ দশমিক ১৯ শতাংশ।
সরেজমিন আগারগাঁও, মিরপুর ও পল্লবী এলাকায় গেলে চোখে পড়বে, দীর্ঘ উড়ালপথ। মূল সড়ক থেকে প্রায় ১৩ মিটার উঁচুতে এই পথে বসছে রেললাইন। চলছে স্টেশন নির্মাণ, বিদ্যুৎ-সংযোগসহ অন্যান্য কর্মযজ্ঞ। শ্রমিকরাও নানা কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কেউ রেললাইন বসানোর কাজ করছেন আবার কেউ কেউ বিদ্যুৎ ব্যবস্থার কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। তবে উত্তরের অংশের তুলনায় দক্ষিণা পাশে কাজের গতি অনেকটা কম বলে মনে করা হচ্ছে। তবে কাওরান বাজার সার্ক ফোয়ারা থেকে বাংলামটরের দকে ভায়াডাক্ট নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে।
মেট্রোরেলের বগি নির্মাণের কাজ ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ও যাত্রীবাহী কোচ (কারবডি) নির্মাণের কাজ ১৬ এপ্রিল জাপানে শুরু হয়। মেট্রো ট্রেনের মকআপ ২৬ ডিসেম্বর উত্তরা ডিপোতে এসে পৌঁছেছে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি উত্তরা ডিপোর এক্সিবিশন ও ইনফরমেশন সেন্টারে এ স্থাপন করা হয়েছে। ছয়টি যাত্রীবাহী কোচ সম্বলিত ৫টি মেট্রো ট্রেন সেটের নির্মাণ কাজ জাপানে সম্পন্ন হয়েছে। জাপান এবং বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হলে উল্লিখিত ৫টি মেট্রো ট্রেন সেট পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হবে। মেট্রোরেল সেটগুলো বাংলাদেশে পৌঁছানোর পর পর্যায়ক্রমে ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট এবং ট্রায়াল রান শুরু করা হবে। এ প্যাকেজের বাস্তব অগ্রগতি ৩৫.০৮ শতাংশ।
২০১৬ সালে হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় ৬ মাস মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ পিছিয়ে যাওয়ার পর এবার করোনা মহামারি প্রভাব পড়েছে। শুরু দিকে বিদেশি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও ঠিকাদাররা বাংলাদেশ ছেড়ে নিজ নিজ দেশে ফিরে গেলেও এখন আবার কাজে যোগ দিতে শুরু করেছেন। ফলে করোনা মহামারির এই দীর্ঘ ৯ মাসে কাজে তেমন একটা অগ্রগতি হয় নি। সব মিলিয়ে মাত্র ১১.৭ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছে মেট্রো কর্তৃপক্ষ। তবে শীতে করোনার প্রভাব বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে নির্মাণ কাজে দুশ্চিন্তা আরও বাড়ছে।
প্রকল্প সূত্র জানিয়েছে, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে দুই মাস কাজ বন্ধ ছিল। গত জুন থেকে কাজ শুরু হলেও প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত বিদেশি নাগরিকদের সিংহভাগ এখনও আসেনি। ফলে কাজে পুরো গতি আসেনি। প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি সংক্রান্ত মাসিক প্রতিবেদন অনুসারে, এপ্রিলে কাজের সার্বিক অগ্রগতি ছিল ৪৪ দশমিক ১২ শতাংশ। এর মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশে ৭২ দশমিক ১২ শতাংশ এবং আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের অগ্রগতি ছিল ৩৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। নয় মাস পর ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৫৫.১৯ শতাংশ। দীর্ঘ এই সময়ে প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ১১.৭ শতাংশ। আর এ সময় পর্যন্ত উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের কাজের মোট অগ্রগতি ৭৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আগারগাঁও থেকে মতিঝিলে অগ্রগতি ৪৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
প্রকল্পের সূত্র জানায়, মেট্রোরেল প্রকল্পে প্রায় ১০ হাজার ব্যক্তি কাজ করেন। এর মধ্যে ১ হাজারের মতো বিদেশি নাগরিক। জাপান, ভারত, চীন, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, যুক্তরাষ্টেুর নাগরিক আছেন। পরামর্শক ও প্রকৌশলীদের একটা বড় অংশই জাপান ও ভারতের নাগরিক। করোনার পরিস্থিতিতে দুই দেশের সঙ্গেই দীর্ঘদিন ভিসা-ফ্লাইট বন্ধ ছিল। বিশেষ ব্যবস্থায়ও আসতে রাজি হচ্ছেন না অনেক বিদেশি নাগরিক।
জানতে চাইলে মেট্রোরেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন সিদ্দিক বলেন, করোনার কারণে কাজের কিছুটা গতি কমেছে। এরপরও আমরা নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। নির্মাণ কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জনবল যাতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে অবস্থান করতে পারেন সেজন্য নির্মাণস্থলের কাছে আবাসিক স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সকল পর্যায়ের জনবলের কাজে যোগদান নিশ্চিত করে বাছাই এর প্রাথমিক পর্যায়ে করোনার কোনও উপসর্গ আছে কিনা তা যাচাই করা হয়। প্রথম পর্যায়ে উত্তীর্ণ জনবলকে দ্বিতীয় পর্যায়ে করোনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ শনাক্তদের হোম অথবা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। প্রয়োজনে সরকারি বা চুক্তিবদ্ধ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কেবল মাত্র করোনা নেগেটিভ জনবলকে কাজের জন্য চূড়ান্ত বাছাই করে ১৪ দিনের গ্রুপ কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। গ্রুপ কোয়ারেন্টিন সম্পন্ন হওয়ার পর তারা কাজে যোগদান করেন। চলমান করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় গাবতলি কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে ১০ শয্যা বিশিষ্ট এবং উত্তরাস্থ পঞ্চবটি কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে ১৪ শয্যা বিশিষ্ট আইসোলেশন সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে। গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৩১২ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তবে করোনায় কেউ মারা যাননি।