সিলেট বিভাগের ৭ পৌরসভায় মেয়র হলেন যারা

মিলান বার্তা ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:৫৪:৫২,অপরাহ্ন ১৭ জানুয়ারি ২০২১ | সংবাদটি ৬৩৩ বার পঠিতসিলেট বিভাগের ৭ পৌরসভায় শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহন সম্পন্ন হয়েছে। উত্তেজনাপূর্ণ এ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ প্রার্থীরাই বেশী জয়ের হাসি হেসেছেন। তীব্র কারচুপির অভিযোগের মাঝে বিএনপির প্রার্থীরাও অভাবনীয় জয় পেয়েছেন।
সাত পৌরসভার মাঝে আওয়ামীলীগ জিতেছে ৪টিতে। আর বিএনপি জিতেছে ৩টিতে, এর মধ্যে একজন বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী। আওয়ামীলীগের চারজনের মাঝে সুনামগঞ্জ পৌরসভায় ফের জয় পেয়েছেন নাদের বখত, ছাতক পৌরসভায় আবারো আবুল কালাম চৌধুরী, কুলাউড়ায় অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন আহমদ ও কমলগঞ্জ পৌরসভায় ফের জয় পেয়েছেন মো: জুয়েল আহমদ। বিএনপি জয়ীদের মাঝে মাধবপুরে জয়ী হয়েছেন হাবিবুর রহমান মানিক, নবীগঞ্জে ফের জয় পেয়েছেন ছাবির আহমদ চৌধুরী। এছাড়া জগন্নাথপুরে জয় পেয়েছেন বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী আক্তারুজ্জামান আক্তার।
সাত পৌরসভার মাঝে কেবল জগন্নাথপুরে প্রথমবারের মতো ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট হয়। বাকী ছয় পৌরসভায় চিরাচরিত প্রথায় ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহন হয়। ৯১টি কেন্দ্রের মাঝে ৭০টিই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহিৃত হলেও বড় ধরণের কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি এসব কেন্দ্রে। তবে কুলাউড়ার কিছু কেন্দ্রে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের ঘটনা ঘটেছে। একটি কেন্দ্রে এক ঘন্টা ভোটগ্রহন বন্ধও ছিলো।
সুনামগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী নাদের বখত বিশাল ভোটের ব্যবধানে ২য় বারের মত বিজয়ী হয়েছেন। তিনি ২১ হাজার ৬৮৬ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী মোর্শেদ আলম ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ৫ হাজার ৮৭০ ভোট পেয়েছেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী রহমত উল্লা হাত পাখা মার্কায় পেয়েছেন ২৩১৪ ভোট। শনিবার রাতে জেলা নির্বাচন অফিসের সম্মেলন কক্ষে রিটার্নিং কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম এ ফলাফল ঘোষণা করেন। পৌরসভা নির্বাচনে মোট তিন জন প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪৯ জন ও সংরক্ষিত মহিলা আসনে ১৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। এ পৌরসভায় ভোটার রয়েছেন ৪৭ হাজার ১৫ জন কেন্দ্র রয়েছে ২৩ টি। সাধারণ কাউন্সিলর পদে যারা বিজয়ী হয়েছেন তারা হলেন, ১নং-ওয়ার্ডে আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কাউছার , ২নং- ইয়াসিন নুর, ৩নং-মোশারফ হোসেন ৪নং- চঞ্চল কুমার লৌহ, ৫নং- গোলাম সাবেরীন সাবু, ৬নং- আবাবিল নুর, ৭নং- আহসান জামিল আনাছ, ৯নং- গোলাম আহমদ, ৮নং ওয়ার্ডে আহমেদ নুর ও শফিক মিয়ার মধ্যে ভোট গণনা নিয়ে অভিযোগ থাকায় রাত ৮ টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ফলাফল জানা যায়নি। জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ মুরাদ উদ্দিন হাওলাদার জানান, পৌরসভায় সুষ্ঠু ভাবে সকাল ৮ থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত শান্তিপুর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
ছাতক পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী, বর্তমান মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী নৌকা প্রতীকে ১২ হাজার ৮শ’ ২৩ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মনোনীত প্রার্থী রাশিদা বেগম ন্যান্সি ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ৭ হাজার ৯শ’ ৮ ভোট। এ নিয়ে পৌরসভায় টানা চতুর্থবারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আবুল কালাম চৌধুরী। বেসরকারিভাবে প্রাপ্ত ফলাফলে নৌকা প্রতীকে আবুল কালাম চৌধুরী ৪ হাজার ৯শ’১৫ ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। এ পৌরসভায় মোট ভোটার ছিলেন ৩০ হাজার ২শ’ ৮জন।
আবুল কালাম চৌধুরী ২০০৪ সালের পৌর নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ছাতা প্রতীক নিয়ে পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। দায়িত্বে ছিলেন ২০১১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ২০১১ সালের নির্বাচনে আবুল কালাম চৌধুরী কাপ-পিরিচ প্রতীক নিয়ে পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন এবং দায়িত্ব পালন করেন ২০১৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে তিনি ফের বিজয়ী হয়েছিলেন।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌরসভার নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতিকের প্রার্থী অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন আহমদ নির্বাচিত হয়েছেন। স্বতন্ত্র (জগ) প্রতিকের প্রার্থী শাজান মিয়াকে ১৫৩ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে বেসরকারীভাবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। অধ্যক্ষ সিপারের প্রাপ্ত ভোট ৪৮৩৮। নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি শাজান মিয়া পেয়েছেন ৪৬৮৫ ভোট। এছাড়া বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান মেয়র শফি আলম ইউনুছ (নারিকেল গাছ) ২৯৯৪ ভোট ও বিএনপির (ধানের শীষ) প্রার্থী সাবেক মেয়র কামাল উদ্দিন আহমদ জুনেদ ১৭৭৬ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছেন।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনের ২৪৫১ ভোটের ব্যবধানে ২য় বারের মতো বেসরকারীভাবে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী মো: জুয়েল আহমদ। তিনি (নৌকা) পেয়েছেন ৫ হাজার ২৫৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র প্রার্থী) মো: হেলাল মিয়া পেয়েছেন (জগ) ২ হাজার ৮০৬ ভোট। এছাড়া আওয়ামীলীগের আরেক বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র প্রার্থী) মো: আনোয়ার হোসেন (নারিকেল গাছ) পেয়েছেন ২ হাজার ৭৮৭ ভোট ও বিএনপি’র প্রার্থী মোহাম্মদ আবুল হোসেন (ধানের শীষ) পেয়েছেন ৩০১ ভোট। শনিবার রাত সাড়ে ৭টায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কমলগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম তালুকদার। শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ২য় ধাপে কমলগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে এই নির্বাচনে কোনও প্রকার বিশৃঙ্খল ঘটনা ঘটেনি।
কমলগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনে ৯টি ওয়ার্ডের ৯টি কেন্দ্রে ১৩ হাজার ৯০৫ জন ভোটারের মধ্যে ১১ হাজার ২১০ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। বাতিল হয় ৫৯টি ভোট। এখানে মেয়র পদে ৪ জন, কাউন্সিলর পদে ৩১ জন ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করেন।
এদিকে কমলগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে ১নং ওয়ার্ডে দেওয়ান আব্দুর রহিম মুহিন, ২নং ওয়ার্ডে সৈয়দ জামাল হোসেন, ৩নং ওয়ার্ডে আনসার শোকরানা মান্না, ৪নং জসিম উদ্দিন সাকিল, ৫নং ওয়ার্ডে মো: ছাদ আলী, ৬নং ওয়ার্ডে রফিকুল ইসলাম রুহেল, ৭নং ওয়ার্ডে গোলাম মুগ্নি মুহিত, ৮নং ওয়ার্ডে আহাদুর রহমান বুলু, ৯নং ওয়ার্ডে বখতিয়ার খান। এছাড়া সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডে মুসলিমা বেগম, ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডে আয়েশা সিদ্দিকা এবং ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডে শাপলা আক্তার নির্বাচিত হন।
হবিগঞ্জের মাধবপুর পৌরসভা নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী হাবিবুর রহমান মানিক ৮৭৫ ভোটের ব্যবধানে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। তিনি ধানের শীষ প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ৫০৩১। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী পংকজ সাহা নারিকেল গাছ প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ৪১৮৫। এছাড়া নৌকার প্রার্থী শ্রীধাম দাশ তৃতীয় হয়েছেন। শনিবার সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত উৎসব মুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়। উপজেলার ৯টি কেন্দ্রের প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত ফলাফলে ধানের শীষের প্রার্থীকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ পৌরসভায় টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ছাবির আহমদ চৌধুরী। শনিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মাত্র ২৬৪ ভোটের ব্যবধানে নৌকার প্রার্থী গোলাম রসুল রাহেল চৌধুরীকে পরাজিত করে তিনি বিজয়ী হন।
বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী, প্রাথমিক ফলাফলে মোট ১০টি কেন্দ্রে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী বর্তমান মেয়র ছাবির আহমদ চৌধুরীর প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ৭৪৯। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী গোলাম রসুল রাহেল চৌধুরীর প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ৪৮৫। এছাড়া স্বতন্ত্র মাহবুবুল হক জগ প্রতীকে পেয়েছেন ২৬১৯ ভোট। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ফলাফল নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। উভয় প্রার্থীর সমর্থকরা নিজেদের বিজয়ী করে বিক্ষোভ মিছিল করছেন। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াকে সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌরসভার নির্বাচনে মেয়র পদে ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্ধন্ধিতা করেন। ১২টি কেন্দ্রের প্রাপ্ত ফলাফলে স্বতন্ত্র হিসেবে বিএনপির বিদ্রোহী আক্তারুজ্জামান আক্তার (চামচ) প্রতিকে ৮৩৭৮ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামীলীগ মনোনীত বর্তমান মেয়র মিজানুর রশীদ ভূইয়া (নৌকা) প্রতিকে ৮০১৮ ভোট পেয়েছেন। এর আগে জগন্নাথপুর পৌরসভায় ইভিএম পদ্ধতিতে প্রথম বারের মতো শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ১২টি কেন্দ্রের ৭৫টি বুথে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।