সুনামগঞ্জে শিশু অপরাধ ৩৫ মামলার ব্যতিক্রমী রায়

মিলান বার্তা ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ২:৩৬:১৬,অপরাহ্ন ২১ জানুয়ারি ২০২১ | সংবাদটি ২৪৩ বার পঠিত- সংশোধনের ১০ শর্তে ৪৯ শিশুর মুক্তি
- আগামী ১ বছর ১০ শর্ত মানতে হবে
- জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা শর্ত যথাযথ পালন হচ্ছে কী না ৩ মাস পর পর প্রতিবদেন আদালতে জমা দিবেন
- সকল শিশুকে ‘দ্যা হান্ড্রেড বই’ উপহার আদালতের
সুনামগঞ্জে নানা অভিযোগে পৃথক ৩৫ টি মামলায় আসামী ছিল ৪৯ শিশু। নিয়ম অনুযায়ী এসব মামলার রায়ে তাদের প্রত্যেকের সাজা হওয়ার কথা ছিল। শিশুদের ভবিষ্যত জীবন ছিল অনিশ্চিত। কিন্তু এই শিশুদের আদালতে নিয়মিত হাজিরা থেকে মুক্তি দিয়ে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিতে সংশোধনের শর্তে মামলা নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন আদালত। মুক্তি পাওয়া এসব শিশুর বিরুদ্ধে মারামারিসহ সাধারণ অভিযোগ ছিল।
বুধবার দুপুরে সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন আসামী, তাদের অভিভাবক ও আইনজীবীদের উপস্থিতিতে এসব মামলায় ব্যতিক্রমী এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সরকারী কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট নান্টু রায়। ব্যতিক্রমী রায় ঘোষণার সময় আদালতে সকল শিশুর মা-বাবা ও আত্মীয় স্বজনরাও উপস্থিত ছিলেন। মুক্তি পাওয়া শিশুদের আদালতের পক্ষ থেকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ একশ মনীষীর জীবনীগ্রন্থ উপহার দেওয়া হয়েছে। ৪৯ শিশু এখন নিজ বাড়িতে তাদের মা-বাবার জিম্মায় থাকবে। কিন্তু আগামী ১ বছর তাদের ১০ টি শর্ত পালন করতে হবে। শর্ত পালনের বিষয়টি তত্ত্বাবধান করবেন জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা শাহ মো. শফিউর রহমান।
বিচারক রায়ে ১ বছর সময়কালে যেসব শর্ত পালনের কথা উল্লেখ করছেন সেগুলো হলো, একশ মনীষীর জীবনীগ্রন্থ পাঠ, মা-বা ও গুরুজনের আদেশ মানা, তাঁদের সেবা করা, তাদের কাজ কর্মে সাহায্য করা, ধর্মীয় অনুশাসন মানা ও নিয়মিত ধর্মগ্রন্থ পাঠ করা, প্রত্যেককে কমপক্ষে ২০টি করে গাছ লাগানো ও গাছের পরিচর্যা করা, অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করা, মাদক থেকে দূরে থাকা এবং ভবিষ্যতে কোনো অপরাধের সঙ্গে নিজেকে না জড়ানো ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। শিশুদের নিয়ে এমন রায় দেওয়ার সময় আদালত উল্লেখ করেছেন, এই রায়ের ফলে ছোটখাট অনেক মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হল। শিশুরা তাদের আপন ঠিকানা ফিরে পেল। মা-বাবার দুশ্চিন্তার অবসান হল এবং তারা তাদের আদরের সন্তানকে নিজের কাছে রেখে সংশোধনের সুযোগ পেল।
জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা শাহ মো. শফিউর রহমান বলেছেন, প্রবেশনকালে এই শিশুরা শর্তগুলো যথাযথভাবে পালন করছে কিনা সেটির তত্ত্বাবধান করা আমার দায়িত্ব। পাশাপাশি অভিভাবকদেরও দায়িত্ব রয়েছে এসব শর্ত পালনে তাদের সহযোগিতা করা, পাশে থাকা। তিন মাস পরপর আদালতে এই বিষয়ে আমাকে প্রতিবেদন দিতে হবে।
রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট নান্টু রায় বলেন, আদালত ৩৫ শিশু অপরাধ মামলায় একসঙ্গে যুগান্তকারী একটি রায় দিয়েছেন। আদালত বলেছেন, প্রবেশনের সময় অপরাধে জড়িত শিশুরা বাবা মা’র আদেশ নির্দেশ মেনে চলা ও বাবা মা’র সেবাযত্ন করতে হবে। ধর্মীয় অনুশাসন মানা ও ধর্মগ্রন্থ পাঠ করতে হবে। প্রত্যেকে কমপক্ষে ২০ টি করে গাছ লাগানো ও পরিচর্যা করতে হবে। অসৎ সঙ্গ ত্যাগ ও মাদক থেকে দূরে থাকতে হবে।