আমাজনের সোনার নদী ও পৃথিবীর ক্ষতি

মিলান বার্তা ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ১:৫৫:৩৮,অপরাহ্ন ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | সংবাদটি ৩৭৮ বার পঠিতসম্প্রতি নাসার তোলা একটি ছবিতে আমাজন বনের ভেতর দীর্ঘ সোনার নদী প্রবাহিত হতে দেখা গেল। বিস্ময় জাগানো এই ছবি দেখে ধারণা করা যায়, এখন পর্যন্ত আমাজনের ভেতরে কতখানি এলাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। সোনা খননের ফলে ক্ষতির মুখে পড়েছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ জীববৈচিত্র্য। আমাজনের নদী ও তার ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে লিখেছেন আরফাতুন নাবিলা
সোনার নদীর উৎস : আমাজন মানেই বিস্ময়। নদীর অববাহিকায় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নিরক্ষীয় বন, উঁচু উঁচু গাছ, কয়েক হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ, লাখ লাখ প্রজাতির কীটপতঙ্গ, পাখি-প্রাণীসহ জীববৈচিত্র্যের আধার এই বন। পৃথিবীর ২০ ভাগ অক্সিজেন আসে এই বন থেকেই। বিশ্বের প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যের একটির নাম আমাজন। বিস্ময়ের ভুবনে এবার এই বৃহৎ রেইনফরেস্ট নাম লেখাল আরেকবার। সম্প্রতি আমাজন বনের গহিনে নদীজুড়ে বয়ে চলা উজ্জ্বল দ্যুতি নজর কেড়েছে বিশ্ববাসীর। এই উজ্জ্বল দ্যুতি আর কিছু নয়। পানির ধারার সঙ্গে মিলে চলা এ দ্যুতি সোনার। ছবি দেখে মনে হচ্ছে নদীগুলো হয়ে উঠেছে সোনার নদী। ছবিতে দেখে স্বর্ণযুক্ত পুরো অঞ্চল ১৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে আছে বলে মনে করা হচ্ছে। মহাকাশ থেকে নাসার তোলা এই ছবিগুলো বিস্ময় জাগিয়েছে। নাসার একজন নভোচারী গত বছরের ডিসেম্বর মাসে এই ছবিগুলো তোলেন। স্যাটেলাইটের ক্যামেরায় লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা খনিগুলোর চিত্র খুব ভালো বোঝা যায় না। কিন্তু এই ছবি তোলার সময় সেখানে রোদের আলো পড়ায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে নদীতে বয়ে যাওয়া স্বর্ণের উজ্জ্বল দ্যুতি। এই সোনার নদী আসলে পাহাড়ের বুকে খোঁড়া অবৈধ সোনার খনির ছবি বলে ধারণা নাসার। আর এই খনির পেছনে রয়েছে অনুমোদনহীন স্বর্ণসন্ধানীরা।
দক্ষিণ-পূর্ব পেরুর মাদ্রে দে দিওসের সোনার খনির অবস্থা কতটুকু ধ্বংসাত্মক অবস্থায় পৌঁছেছে, সেই নজির পাওয়া যায় এই ছবিগুলোর মাধ্যমে। প্রথম সারির সোনা রপ্তানিকারক একটি দেশ পেরু। মাদ্রে দে দিওস অঞ্চলটি আমাজনের বনের মধ্যে। জীববৈচিত্র্যের জন্য বেশ সমৃদ্ধ একটি অঞ্চল এটি। তবে এর পাশাপাশি এখানে রয়েছে স্বর্ণের এক বিশাল অনিবন্ধিত শিল্প। আর এখানে কাজ করে যাচ্ছেন হাজার হাজার খনিশ্রমিক। বছরের পর বছর ধরে এই খননকাজের জন্য নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে প্রাণীদের আবাসস্থল। সোনা নিষ্কাশনে ব্যবহার করা পারদের কারণে খনি এলাকার আশপাশের অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে বিষক্রিয়া। শুধু তা-ই নয়, পারদের বড় একটি অংশ নদী বা বায়ুমণ্ডলে নির্গত হচ্ছে। শ্রমিকরা যেসব গর্তে স্বর্ণের খোঁজ করেন, সেসব জলাধারের সংখ্যা অগণিত। শত শত এমন জলাধার পানিভর্তি হয়ে আছে। কাদা দিয়ে ঘিরে এবং গাছপালা পরিষ্কার করে এসব গর্ত তৈরি করা হয়েছে। খনিশ্রমিকরা পুরনো নদীগুলো অনুসরণ করেন যেখানে খনিজ পদার্থসহ পলি জমা হয়। এই অংশটি বানর, জাগুয়ার, প্রজাপতিসহ অন্যান্য প্রাণীর আবাসস্থল। ধারণা করা হয়, খনির খননই এই অঞ্চলের বন নিধনের প্রধান কারণ। স্বর্ণ অনুসন্ধান নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছিল বেশ অনেক দিন ধরেই। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসের এক গবেষণা তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে পেরুর আমাজনে ২২ হাজার ৯৩০ একর বনভূমি স্বর্ণসন্ধানীদের কারণে ধ্বংস হয়েছে। সোনার দাম বাড়ার কারণে বৈষম্যের শিকার স্থানীয় সম্প্রদায়ের লোকজন খনিশ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। এর আগে ২০১২ সালের তথ্য অনুযায়ী, পেরুর ওই অঞ্চলে ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ স্বর্ণসন্ধানী হিসেবে কাজ করতেন। পেরুর লা পাম্পা এলাকায় ২০১৯ সালে সরকারি নির্দেশে এক দশকের বেশি সময় ধরে চলা স্বর্ণ অনুসন্ধান থামানো হয়। সে সময় ৫০ হাজারেরও বেশি স্বর্ণশ্রমিককে কাজ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
পেরুতে স্বর্ণ খনন : আমাদের সমাজে স্বর্ণের মূল্য অনেক বেশি। বিজ্ঞাপনে, বিনোদনে ও দোকানে এই স্বর্ণ হরহামেশাই দেখা যায়। অর্থ, সম্পদ, খ্যাতি, বিলাসিতা সবকিছুর পেছনে স্বর্ণের একটি শক্তিশালী ভূমিকা আছে। অথচ দামি এই জিনিসটির সংগ্রহ পদ্ধতি মোটেও সন্তোষজনক নয়। অবৈধ খনন অর্থই হচ্ছে রাষ্ট্রের অনুমতি ছাড়া পৃথিবীর বুক থেকে খনিজ বা পদার্থ তুলে আনা। খননের জন্য এবং খনিজ পণ্য বহনের জন্য রাষ্ট্রীয় অনুমতি নিলে খনন পদ্ধতি আরও সহজ হয়ে যায়। লগিং, বন্যপ্রাণী ট্র্যাকিং অথবা স্বর্ণ খননÑ সবকিছু মিলিয়েই অবৈধ খনন হতে পারে। আর এসব কাজই নিষিদ্ধ। কারণ পরিবেশ ও মানবজীবনের ওপর এসব কাজের প্রভাব পরে খুবই নেতিবাচকভাবে। পরিবেশগত অনেক বাধা ও নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও লাতিন আমেরিকার গ্রাম্য এলাকাগুলোয় অবৈধ সোনা উত্তোলন খুবই সাধারণ একটি বিষয়। আমাজন রেইনফরেস্টের আশপাশের এলাকাগুলোয় এ কাজ দিনে দিনে বাড়ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ব্রাজিল ও বলিভিয়ার সীমান্তবর্তী দক্ষিণ-পূর্ব পেরু অঞ্চলের একটি এলাকা মাদ্রে দে দিওসের লা পাম্পার কথা। সোনার দাম যত বাড়ছে, তত পেরুতে স্বর্ণ খননের পরিমাণও বাড়ছে। বলা হয়, এই জায়গায় নিয়মিত দেবতাদের মা ম্যারি আসতেন। দেবতার মায়ের পা পড়লেও বাস্তব জীবনে এই নাম জড়িয়ে আছে অবৈধ সোনা খননের সঙ্গে। এই এলাকাটি তুলা, কফি, আখ, কোকো, বাদাম আর পাম তেলের জন্য বিখ্যাত। এসবের বাইরে দশ হাজারেরও বেশি অবৈধ সোনা খননকারীর মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণ সোনা আহরণের কারণে পরিবেশের যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনই তাদের স্বাস্থ্য ও স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হচ্ছে। পেরু বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম এবং লাতিন আমেরিকার প্রধান স্বর্ণ উৎপাদনকারী দেশ। অবৈধ এই খননকাজ বন্ধ করার জন্য পেরু ও আমেরিকার সরকার পেরুর ইকো সিস্টেম ও জনগণের স্বাস্থ্যসুরক্ষার জন্য একত্র হয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
স্বর্ণ উত্তোলন : স্বর্ণ উত্তোলনের দুটি পদ্ধতি আছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, ছোট ছোট ভেলায় করে খননকারীরা নদীর পৃষ্ঠ থেকে মাটি তোলে। সেই মাটি ছোট ছোট চালুনির মাধ্যমে চেলে নেয়। এখান থেকেই পাওয়া যায় ছোট ছোট স্বর্ণের দানা। এভাবে ভাসমান সোনার খনন নদীর স্রোত ও প্রবাহকে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত করে। ধ্বংস হয় আশপাশের আবাসস্থল। অন্য পদ্ধতিতে, খননকারীরা বনের ভেতর কিছু অঞ্চলের গাছ কেটে সেখানে আগুন লাগিয়ে দেয় যেন মাটির নিচে গভীর পর্যন্ত যাওয়া যায়। আঁটসাঁট পাজামা পরে সেই গর্তে প্রবেশ করা হয়। যে মাটিটুকু আলগা আছে সেখানে পানি স্প্রে করা হয়। মাটি সরে কাদা কাদা হয়ে গেলে সেখানে চালনি দিয়ে ছেঁকে সংগ্রহ করা হয় স্বর্ণ। দুটো ঘটনায়ই একটি পিপের মধ্যে পানিমিশ্রিত পলি নেওয়া হয় এবং পারদ যোগ করা হয়। এই পারদ সোনার জন্য চুম্বকের মতো কাজ করে। পলি থেকে সোনাগুলো সব পারদের সঙ্গে আটকে যায়। পারদের সোনালি রঙের সঙ্গে সোনা লেগে থাকে বলে একে দেখতে রুপালি স্বর্ণ বলে মনে হয়। একবার সোনা সংগ্রহ শেষ হয়ে গেলে পারদের পানি ফেলে দেওয়া হয় নদীতে। সেই পানি পুরোটাই পারদমিশ্রিত হয়ে যায়। যাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় মাছের।
খননকারীরা জঙ্গলে গর্ত খুঁড়ে যে গর্ত তৈরি করে যা মহাকাশ থেকেও দেখা যায়। খননকাজের ফলে তৈরি হওয়া কৃত্রিম এই জলাধারগুলো মশার বংশবৃদ্ধির জায়গায় পরিণত হয়। কাজেই আমাজনের ওইসব অঞ্চলে ম্যালেরিয়ার ব্যাপকতা অনেক বেশি। এ ছাড়া খননকাজে ব্যবহৃত পারদ নদীর মাছসহ পুরো খাদ্যচক্রকেই প্রভাবিত করে। এই পারদের বিষক্রিয়ায় মানুষের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত এবং মারাত্মক বিকলাঙ্গের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। ২০১৬ সালে ব্রাজিলের শীর্ষস্থানীয় একটি জনস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, কয়েকটি ইয়ানোমামি গ্রামের ৯২% মানুষই পারদের বিষক্রিয়ার শিকার। ধারণা করা হয়, নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠীদের এলাকায় খননকাজ বৃদ্ধি পাওয়াই সহিংসতা ও অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধির কারণ।
কেন এ এলাকায় স্বর্ণ খননকারী বেশি : মাদ্রে দে দিওসে সাম্প্রতিক সময়ে স্বর্ণ খননকারীর সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। কেন দিন দিন এই সংখ্যা বাড়ছে সেটির জন্য তিনটি কারণ বলা যায়। প্রথমটি হচ্ছে, বিশ্বজুড়ে সোনার দাম ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি। স্বর্ণ বিক্রির মাধ্যমে অর্থনৈতিক অর্জন বেশি বলে এই কাজে আগ্রহ বেশি খননশ্রমিকদের। এই দাম নির্ধারিত হচ্ছে কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া ও শিল্প খাতের সঠিক নিয়ম না মেনে। দ্বিতীয় কারণ হিসেবে রয়েছে, দেশটির চরম দরিদ্রতা। মাদ্রে দে দিওসে খননকাজ করে ভাগ্য ফেরাতে অনেক দরিদ্র অভিবাসী এসেছে। এই এলাকার বেশির ভাগ মানুষই স্বর্ণ খনন অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত। গত ২০ বছরে, স্বর্ণ অর্থনীতির অংশ হতে এই এলাকায় ৩০ হাজারেরও বেশি অভিবাসী এসেছেন। আর সবশেষ কারণ হচ্ছে, অবৈধ স্বর্ণ খননে সরকারিভাবে এই এলাকা পর্যবেক্ষণ করার জন্য তেমন কেউ নিয়োজিত নেই। কর্র্তৃপক্ষের সরাসরি উপস্থিতি না থাকায় শ্রমিকরা পরিবেশের কোনো ধরনের তোয়াক্কা না করে একের পর এক খননকাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
খননের ক্ষতিকর প্রভাব : স্বর্ণ খননের পুরো লাভ আন্তর্জাতিক বাজার ভোগ করলেও উত্তোলনের যে নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে, তার পুরোটাই পড়ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের ওপর। মাদ্রে দে দিওসে খনির সাম্প্রতিক সংখ্যা বৃদ্ধি জনগণ ও তাদের ইকো সিস্টেমের ওপর বর্তমানে হুমকিস্বরূপ। অনানুষ্ঠানিক খননের ওপর আলোকপাত করলে তিন ধরনের স্থানীয় প্রভাবের ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে। এরা সবাই সবার সঙ্গে পারস্পরিকভাবে সংযুক্ত।
ইকোসিস্টেমের ক্ষতি : নদীর তীরে এবং বনের ভেতর এভাবে একের পর এক এলাকা নষ্ট করার কারণে মাটির নিচের স্তর ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আগুন দেওয়ার কারণে এবং বন নিধনের জন্য ব্যবহার করা যন্ত্রপাতি নিষ্ঠুর প্রভাব রেখে যাচ্ছে বন্যজীবনে। কমে আসছে বনের কার্বন নিঃসরণ ক্ষমতা। আমাজন রেইনফরেস্টে এই খননের ক্ষতিকর প্রভাব এখন সেভাবে বোঝা না গেলেও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এটিকে এখন সতর্কবার্তা বলা যায়। কারণ স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হলে সেটি প্রতিহত করার ক্ষমতাও বনের কমে আসবে অনেক। আর পৃথিবীর জন্য কোনোভাবেই এটি ভালো কিছু নয়।
আবাসস্থলের ক্ষতি ও জীববৈচিত্র্যের হুমকি : মাদ্রে দে দিওসে টেরোনুরা ব্রাসিলিয়েনসিস নামের স্তন্যপায়ী প্রাণীটির একটি সুরক্ষিত আবাসস্থল ছিল। ২০ শতকে এসে সেই সংখ্যা দিন দিন অনেক কমে আসছে। এর অন্যতম কারণ পারদ। দিনে এই প্রাণীটির চার কেজির বেশি মাছ প্রয়োজন হয়। এই মাছ ধরার অন্যতম কেন্দ্রস্থল নদী। অথচ নদীর পানিতে পারদ মিশে থাকায় তাদের জীবননাশ হচ্ছে দ্রুত। বিভিন্ন প্রজাতির পাখিসহ মাছেরাও বেঁচে থাকত এই নদীর ওপর নির্ভর করেই। নৃ-তাত্ত্বিক প্রভাব এই এলাকায় এত বাড়ছে যে, রীতিমতো এখানকার জনগণের ওপর তা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলা শুরু করেছে। এমনকি সীমিত যতগুলো প্রাণী এখানে টিকে আছে, তাদের জন্যও বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এ মুহূর্তে মাদ্রে দে দিওস জীবন বাঁচানোর বদলে হয়ে উঠছে আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য ক্ষতির অন্যতম উৎস।
পারদের দ্বারা দূষণ : শ্রমিকরা যখন সরাসরি পারদের সংস্পর্শে আসছে, তখন যে শুধু তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা-ই নয়, বিপুলসংখ্যক মাছ মারা যাচ্ছে। নদীর তীরের মানুষের স্থানীয় খাবার মানেই নদীর মাছ। আর এই মাছ যখন অসুস্থ হচ্ছে, তখন এগুলো খাওয়ার পর বাসিন্দারাও ধীরে ধীরে শারীরিকভাবে নানা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় জানা গেছে, মাদ্রে দে দিওসে যত মাছ বিক্রি করা হয়, তার ৬০ শতাংশ পারদ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত। হবু মা এবং তাদের অনাগত সন্তানের জন্য এই মাছ খুবই ক্ষতিকারক। মানসিক গঠন, অন্ধত্বের কারণও এই পারদ। এ ছাড়া ত্বকেও নানা সমস্যা দেখা যায় এই পারদের কারণে।
প্রেসিডেন্টের অনুমতি ও আদিবাসীর ওপর প্রভাব : অবৈধভাবে এমন বন নিধনে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বলসানোর হাত আছে বলে মানেন পরিবেশবিদ এবং নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠীর নেতারা। এর কারণ হচ্ছে ২০১৯ সালে এক লাইভ অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্টের সরাসরি এ বিষয়ে মতামত দেওয়া। প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, ‘যদি আসলেই ব্যাপকহারে বন উজাড় করা হতো, তাহলে পুরো জঙ্গলটাই এত দিনে ধ্বংস হয়ে যেত। আমি যতদূর উদ্বিগ্ন, তাতে যদি একজন আদিবাসী তার নিজের ভূমি থেকে খনিজ পদার্থ উত্তোলন করতে চান, তাহলে তিনি তা পারবেন।’ প্রেসিডেন্টের এমন মন্তব্যের পর খনন শ্রমিকদের মধ্যে খননের আগ্রহ আগের তুলনায় আরও বেড়েছে। অবৈধ এই খনিশ্রমিকদের অধিকাংশ দরিদ্র শ্রেণির, যাদের কোনো শিক্ষা নেই। তবে তারা স্বপ্ন দেখেন হঠাৎ ধনবান হয়ে যাবেন। তাদের মধ্যে নিরক্ষরতার হার সর্বোচ্চ।
আমাজনের ছোট্ট শহর ক্রিপুরিজাও থেকে প্রতিদিন কয়েক ডজন ছোট বিমানে করে খনন মেশিনের যন্ত্রাংশ, জ্বালানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে যাওয়া হয় গভীর জঙ্গলে। আন্তর্জাতিক এক সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলে তারা জানিয়েছিলেন তাদের সহজ-সরল ও স্বাভাবিক জীবনযাপনের কথা। জানিয়েছিলেন কীভাবে এ কাজে প্রচুর পরিমাণে উপার্জন করা যায়, কীভাবে অর্জিত অর্থ মদ্যপান ও পতিতালয়ে গিয়ে তারা শেষ করেন। স্বর্ণখনি সম্রাট যারা আছেন তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে স্থানীয় আদিবাসী গোষ্ঠী। যদিও দুই বছর আগে আদিবাসীদের ভূখণ্ডে খনিজসম্পদ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়। ধ্বংস করা হয় বেশ কিছু মেশিন। তবে স্বর্ণ সম্রাটদের মতে, এসব কাজ করা হয় বলেই আদিবাসীরা বেঁচে থাকে। খাওয়া-দাওয়া করতে পারে, মোটরসাইকেল, ফ্রিজ, টেলিভিশন কিনতে ও ভালো পোশাক পরতে পারে।