সর্বক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত : চলছে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা

মিলান বার্তা ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৪৮:১৭,অপরাহ্ন ১১ মে ২০২১ | সংবাদটি ২০৩৯ বার পঠিতদোরগোড়ায় ঈদ উল ফিতর। শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় ব্যস্ত মানুষ। সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে বেচাকেনার ধুম। ক্রেতাদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন বিক্রেতারা। চলমান লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করেই চলছে ঈদের বাজার। করোনার ব্যাপক সংক্রমণের মধ্যে এমন জনস্রোতে উদ্বিগ্ন সচেতন মহল।
অন্যদিকে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে শপিংমলগুলোয় সরকারি নির্দেশনার কোনো প্রতিফলনও তেমন পরিলক্ষিত হয়নি। ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত বিপণিবিতানেও মানুষের ভিড়। কোলের শিশুটিও ঈদের কেনাকাটার ভিড়ে যুক্ত হয়েছে। তারাও মানুষের ভিড় ঠেলে বাড়ি ফিরছে।
গতকাল সোমবার সরেজমিন নগরীর শপিংমলগুলোয় স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই চোখে পড়েনি। বেশির ভাগের মুখে মাস্ক ছিল না। সচেতনতা ছিল না বিক্রেতাদের মধ্যেও। বেশির ভাগ শপিংমলগুলোতে ছিল না জীবাণুনাশক টানেল। কোথাও মানা হচ্ছে না যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি। স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার শর্তে বিপণিবিতান খোলা রাখা হলেও বিষয়টি সম্পূর্ণ উপেক্ষিত থাকছে।
জিন্দাবাজার, নয়াসড়ক ও বন্দরবাজারের বেশ কয়েকটি অভিজাত দোকানগুলোয় উপচে পড়া ভিড়। অনেকটা ঠেলাঠেলি করে কেনাকাটায় ব্যস্ত ক্রেতারা। করোনা মহামারির এই সংকটে শিশুদের নিয়ে নিশ্চিন্ত মনে দোকানে দোকানে ঘুরছেন অভিভাবকরা। দোকানে দোকানে ভিড় করা এসব মানুষের অনেকে মাস্ক পর্যন্ত ছিল না। শারীরিক দূরত্বের বালাই নেই বললেই চলে। এই দৃশ্যগুলো ভাবিয়ে তুলেছে সচেতন মানুষকে।
এদিকে, করোনা পরিস্থিতির কারণে চলমান লকডাইন ও বর্ডার দিয়ে পণ্য সরবরাহ বন্ধ থাকায় সিলেটের মার্কেটগুলো পোশাক সংকটে পড়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। ভারতীয় পোশাক আমদানি না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা। সেই সাথে পছন্দসই পোশাক না পেয়ে হতাশ ক্রেতারা। কারণ সিলেটে ক্রেতাদের পছন্দের অগ্রভাগে থাকে ভারতীয় পোশাক। এবার ভারতীয় পোষাক নেই। কিন্তু সিলেটের পোশাক বাজারে ভারতীয় ও বিদেশী কাপড়ের ‘কপি’ পোশাকে সয়লাব। কিন্তু এগুলো মানহীন।
এদিকে, পোশাকের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সুতাসহ অন্যান্য কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় কাপড়ের দাম বেশি। ঈদের বাজারে শতকরা ৭৫ ভাগ কাপড়ই থাকতো ভারতের। সেই জায়গায় গত দুই বছর ভারত থেকে কোনো পণ্যই আসছে না বলে জানান ব্যবসায়ীরা। এক্ষেত্রে দেশীয় পোশাকের বাজারে এটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী নেতারা। এবছর দেশীয় গার্মেন্টেসে তৈরি ভারতীয় ও পাকিন্তানী কাপড়ের কপি পোশাকই চলছে বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা। রেডি আনরেডি ত্রি-পিস ও শাড়ির চাহিদাই বেশি। পাশাপশি দেশীয় সুতির কাপড়েরও চাহিদা রয়েছে। ভারতীয় জর্জেট, কাতান এবং পাকিস্তানী বারিস কাপড়ের চাহিদা বেশি। দাম বেশি নিলেও কপি পোশাকের কোয়ালিটি নিয়ে সন্তুষ্ট নন ক্রেতারা।
সিলেট মহানগর ব্যবসায়ী সমিতি সভাপতি আব্দুর রহমান রিপন বলেন, গত কয়েকদিন ধরে ব্যবসা কিছুটা হচ্ছে। ভারতীয় পণ্য বাজারে না আসায় এটা আমাদের দেশের জন্য খুব ভালো হয়েছে। তবে কাস্টমাররা হতাশ। কাপড়ের দাম বাড়ার প্রসঙ্গে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, সুতা সহ অন্যান্য কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় কাপড়ের দাম কিছুটা বেড়েছে। শপিংমলগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা প্রত্যেকটি শপিংমলের সভাপতি সেক্রেটারিকে নির্দেশ দিয়েছি স্বাস্থ্যবিধি মেনেই যেন মার্কেট খোলেন। কিছু মাকের্ট কমিটি তারা নির্দেশনা মানছেন। আবার কিছু মানছেন না। ইতোপূর্বে একটি শপিং সেন্টারকে স্বাস্থ্যবিধি না মানার জন্য জরিমানা ও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আমরা বার বার বলে দিয়েছি। এখন যারা মানছেন না তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিলে আমরা তাদের কোনো দায়দায়িত্ব নিব না ।
দোকানপাট ও শপিংমলগুলো পূর্বের মতো সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। সব দোকানপাট ও শপিংমলে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে প্রতিপালন নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় দোকানপাট ও শপিংমল তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে।’ করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে চলমান লকডাউন আগামী ১৬ মে পর্যন্ত বাড়িয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, সেখানে কথাগুলো স্পষ্টভাবে উল্লেখ হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ঈদ সামনে রেখে সিলেটের শপিংমলগুলোয় সরকারের এ নির্দেশনার কিছুই মানা হচ্ছে না। সেই প্রজ্ঞাপনে মাস্ক ব্যবহার শতভাগ নিশ্চিতের কথাও বলা হয়েছে। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু সেখানে চরম আকাল লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই বিষয়টি তোয়াক্কা করছেন না। ঈদের কেনাকাটা রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকার কথা বলা হলেও মধ্যরাত পর্যন্ত দোকানপাট খোলা রাখা হচ্ছে। নগরীর ব্লু ওয়াটার শপিং মলের নেহার ফেব্রিক্সের বিক্রয় কর্মী সুমন আহমেদ জানান, বাজার জমবে না এই ভয়ে তিনি নতুন কাপড় তুলেননি। কিন্তু বাজারে মানুষের যে ঢল, তাতে বোঝা যাচ্ছে অতিরিক্ত চালান তুললে ক্ষতি ছিল না।
সিলেট সিটি করপোরেশন, জেলাপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে মানুষকে সচেতন করার নানামুখি চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু কোনোভাবেই মানুষের সচেতনা বৃদ্ধি করা যাচ্ছে না।