নিরাপদ সড়ক কত দূর?

মিলান বার্তা ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৩৪:১১,অপরাহ্ন ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১ | সংবাদটি ১০৯ বার পঠিতঢাকায় ২০১৮ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই স্কুলশিক্ষার্থী রাজীব এবং দিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় সারা দেশে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল শিক্ষার্থীরা। সেই স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনে চাপে পড়ে সরকার দেশের সড়ক নিরাপদ করার আশ্বাস দেয়। দ্রুততার সঙ্গে তৈরি করা হয় সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮। পরে এই আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে পরিবহন সংগঠনগুলো। তাদের দাবি অনুযায়ী এখন আইনটিতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। ফলে নিরাপদ সড়ক বা সড়কে শৃঙ্খলা অধরাই থেকে যাচ্ছে জনবহুল এই নগরীতে। আবার বাসগুলোর রেষারেষিতেও চলছে আগের মতোই।
জানা গেছে, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবের সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ ২৩টি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, বিভিন্ন বিভাগ ও সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিদের আজকের অনলাইন বৈঠকে যোগ দিতে বলা হয়েছিল।
চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় তাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে জনগণের মতামত চেয়ে সংশোধনের খসড়াটি আপলোড করে। এ ছাড়া মতামত জানতে চেয়ে খসড়াটির ১৫ থেকে ১৬টি মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হয়।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ইউসুব আলী মোল্লা বলেন, খসড়ার ওপর প্রায় সাত-আটটি মন্ত্রণালয়, শ্রমিক ও অন্যান্য সংগঠন এবং সাধারণ নাগরিকরা তাদের মতামত দিয়েছেন।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক বিক্ষোভের পর ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাতীয় সংসদে সড়ক পরিবহন আইনটি পাস হয়। তবে, ২০১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সরকার আইনটি কার্যকর করেনি। আইনটি পাস হওয়ার পরই পরিবহন শ্রমিকরা আইনটি পরিবর্তনের দাবিতে ধর্মঘট শুরু করেন। আইনটি কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তা পর্যবেক্ষণের জন্য ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি আইন, স্বরাষ্ট্র ও রেলমন্ত্রীকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ২০১৯ সালের নভেম্বরে সরকার আইনটি কার্যকরের উদ্যোগ নিলে পরিবহন সংগঠনগুলো ওই আইনের বেশ কয়েকটি ধারায় পরিবর্তন আনার দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দেয়। সরকার সে সময় ওই আইনের বেশ কিছু ধারা কার্যকর না করার সিদ্ধান্ত নেয়।
খসড়া অনুযায়ী আইনটি সংশোধন করা হলে বেপরোয়া ও অবহেলায় গাড়ি চালিয়ে কাউকে আহত করলে চালককে দায়ী করা যাবে না। শুধু সড়ক দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে আইনটি প্রযোজ্য হবে।
খসড়ায় আরো বলা হয়েছে, ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতার পরিবর্তন করা হবে। চালকরা, যারা নিবন্ধিত থ্রি-হুইলার চালাবেন তাদের অষ্টম শ্রেণির পরিবর্তে পঞ্চম শ্রেণির সার্টিফিকেট থাকলেও লাইসেন্স পাবেন। অন্য যানবাহন চালানোর লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা অপরিবর্তিত থাকবে।
খসড়ায় আরো বলা হয়েছে, যদি লাইসেন্স প্রাপ্ত কন্ডাক্টর বা সুপারভাইজারের কমপক্ষে ১০ বছর যানবাহনে কাজ করে ড্রাইভার হিসেবে দক্ষতা অর্জন করতে পারেন এবং ড্রাইভিং পরীক্ষায় পাস করতে পারেন, তাহলে এই যোগ্যতাগুলোর প্রয়োজন হবে না। খসড়ার বিষয়ে সন্তুষ্ট নয় উল্লেখ করে এর কিছু পরিবর্তন চেয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন।
ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী জানান, তারা এই আইনের ৩৪টি ধারায় পরিবর্তনের কথা বলেছেন এবং জানিয়েছেন তাদের দাবি পূরণ না হলে বিক্ষোভ করবেন। আমরা খসড়াটি দেখেছি এবং বেশ কিছু ক্ষেত্রে আমাদের দাবি পূরণ হয়নি। আমরা বিষয়টি তাদের জানিয়েছি। খসড়া সংশোধনটি এখনো চূড়ান্ত নয় এবং তারা আজকের বৈঠকের ফলাফল দেখবেন।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খোন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, দু-একটি বিষয় বাদে শ্রমিক সমিতির উত্থাপিত বেশির ভাগ বিষয়ের সমাধান হয়েছে। তবে আমরা যা দাবি করেছি, তার শতভাগ আদায় নাও হতে পারে।
এদিকে, সড়কে বিশৃঙ্খলার কারণে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে। চলতি বছরের সাত মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ হাজার ৯৫ জন নিহত হয়েছে বলে পুলিশের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। যা ২০২০ সালের তুলনায় অনেক বেশি মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে।
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকা কয়েকজন মনে করছেন, করোনা মহামারিতে সড়কে বাস-মিনিবাস বন্ধ থাকায় মোটরসাইকেল ও তিন চাকার যানবাহন চলাচল করায় সড়ক দুর্ঘটনা বেশি ঘটেছে। এ কারণে সাত মাসেই সড়ক দুর্ঘটনায় গত বছরের তুলনায় বেশি মানুষ মারা গেছেন।
পুলিশের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের সাত মাসের মধ্যে মে মাসেই সর্বোচ্চ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। গত বছরের প্রথম সাত মাসে ২ হাজার ২১১ জন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হলেও চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে এ সংখ্যা বেড়ে ৩ হাজার ৯৫ জন হয়েছে।
জানা গেছে, করোনার কারণে মহাসড়কে বাস ও মিনিবাস বন্ধ থাকায় ইজিবাইক, মোটরসাইকেল, ব্যক্তিগত গাড়িসহ বিভিন্ন ছোট যানবাহন চলেছে। এতে সড়কে দুর্ঘটনা বেড়েছে। ব্যস্ত মহাসড়কে মালবাহী যানবাহনের চলাচল অব্যাহত থাকায় সংঘর্ষ ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে।
গত ২৩ মে বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতি জানায়, ঈদের সময় দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও, ১৫ দিনে ৩১৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ৩২৩ জন নিহত হয়েছেন।
‘নিরাপদ সড়ক চাই’-এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ২০১৬ সালের পর সারা দেশে মোটরসাইকেলের সংখ্যা বাড়ায় সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে। সম্প্রতি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটছে।