শিক্ষক-সংকটে বালিজুড়ী রওশন আরা স. বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়

মিলান বার্তা ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ২:২৪:৫৬,অপরাহ্ন ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ | সংবাদটি ৮৩ বার পঠিতচরম শিক্ষক সংকট নিয়ে চলছে জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার একমাত্র সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রম। বিদ্যালয়ে ১২ জন শিক্ষকের মধ্যে বর্তমানে আটজনের পদই শূন্য। বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজ বাস্তবায়ন করছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকস্বল্পতার কারণে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় এক বিষয়ের শিক্ষক অন্য বিষয়ে ক্লাস নিচ্ছেন। এতে ওই বিদ্যালয়ের তিনশতাধিক শিক্ষার্থী কাঙ্ক্ষিত পাঠদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
জানা গেছে, ১৯৬৪ সালে স্থাপিত বালিজুড়ী রওশন আরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি ১৯৮৭ সালে সরকারি করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এলাকার নারী শিক্ষা বিস্তারে বিদ্যালয়টি ভূমিকা রেখে আসছিল। দীর্ঘদিন থেকে শিক্ষক-সংকটের কারণে ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষাকার্যক্রম ভেঙে পড়েছে। ২০১৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজ বাস্তবায়ন করছেন। বিশেষ করে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের অভাবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে ওই বিদ্যালয়ে ৩১২ শিক্ষার্থী রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক সংকট থাকা সত্ত্বেও ২০১৬ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল ১০৮ জন, পাস করেছে ১০৭ জন। ২০১৭ সালে পরীক্ষার্থী ছিল ৮৮ জন, পাস করেছে ৮২ জন। ২০১৮ সালে পরীক্ষার্থী ছিল ৯৪ জন, পাস করেছে ৪২জন। ২০১৯ সালে পরীক্ষার্থী ছিল ৯৭ জন, পাস করেছে ৮৪ জন। ২০২১ সালে ৫৫জন শিক্ষার্থী পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করবে।
শিক্ষকেরা জানান, প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য থাকায় সহকারী প্রধান শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও সাতটি শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় এক বিষয়ের শিক্ষক অন্য বিষয়ে ক্লাস নিতে হচ্ছে। এতে অন্য শিক্ষকদের ওপর চাপ বাড়ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী জানান, গণিত, ইংরেজি, বাংলা, ভৌত বিজ্ঞান, ভূগোল, সামাজিক বিজ্ঞান ও শারীরিক শিক্ষা এ বিদ্যালয়ে এসব বিষয়ে শিক্ষক নেই। ফলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। তাই ফলাফলও ওইসব বিষয়ে বেশি খারাপ হচ্ছে। এ জন্য বিদ্যালয়ের বাইরে কোচিং ও প্রাইভেট পড়তে হচ্ছে।
এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, তিন ভাগের একভাগ শিক্ষক দিয়ে বিদ্যালয়টি চলছে। শিক্ষক-সংকট লেগে থাকার কারণে বিদ্যালয়ে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের যেন কোনো মাথাব্যথা নেই। শিক্ষক সংকটের ফলে শিক্ষার্থীরা চাহিদা অনুযায়ী মেধা বিকাশের সুযোগ পাচ্ছে না। বছর শেষ হলেও সিলেবাস শেষ হচ্ছে না। বাচ্চাদের সিলেবাসের পড়া শেষ করাতে আলাদাভাবে কোচিং ও প্রাইভেট পড়াতে হচ্ছে।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক লেঃ মোঃ শাহ আলম জানান, বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট থাকার কারণে পাঠদানসহ অন্যান্য কার্যক্রমে সমস্যা হচ্ছে। ১২ জন শিক্ষকের মধ্যে মাত্র চারজন শিক্ষক আছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রধান শিক্ষক পদটিই শূন্য ২০১৮ সাল থেকে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন থেকে গণিত, ইংরেজি, বাংলা, ভৌত বিজ্ঞান, ভূগোল, সামাজিক বিজ্ঞান ও শারীরিক শিক্ষায় একজন করে শিক্ষকের পদ শূন্য। এখানে শিক্ষক-সংকটের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও সংকটের সমাধান হচ্ছে না। তাই বাইরে থেকে একজন খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে কোনো রকমে পাঠদান কার্যক্রম সচল রাখার ব্যবস্থা করেছি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আইনুল হক জানান, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা এবং নিরবচ্ছিন্ন পাঠদান অব্যাহত রাখতে ওই বিদ্যালয়টির শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া জরুরি। এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইলিশায় রিছিল জানান, বালিজুড়ী রওশন আরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকটের বিষয়টি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অনেকবার অবহিত করা হয়েছে।