সুনামগঞ্জ-নেত্রকোনা উড়াল সড়ক একনেকে অনুমোদন
মিলান বার্তা ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:২৩:৪৪,অপরাহ্ন ২৪ নভেম্বর ২০২১ | সংবাদটি ১৭৯ বার পঠিতঅবশেষে সব প্রতিবন্ধকতার দুয়ার খুলেছে। বাস্তব রূপ পেতে যাচ্ছে সুনামগঞ্জ-নেত্রকোনা স্বপ্নের উড়াল সড়ক প্রকল্প। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পেয়েছে ৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকার এই মেগা প্রকল্পের।
এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে স্বল্প সময়ে সুনামগঞ্জ থেকে নেত্রকোনা এবং নেত্রকোনা থেকে ঢাকা আসা-যাওয়া সম্ভব হবে। এছাড়াও খুলে যাবে হাওর কেন্দ্রিক পর্যটনের নতুন দুয়ার।
প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, প্রকল্পের সবকিছুই হবে দৃষ্টিনন্দন ও চোখ ধাঁধানো। হাওর অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত। এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা মূলত গ্রামীণ ডুবন্ত সড়ক, যা কেবল শুষ্ক মৌসুমে ব্যবহার করা যায়। বর্ষা মৌসুমে নৌ-পরিবহনই এখানকার প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম। এ ধরনের অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে কৃষিপণ্য উৎপাদন ও পরিবহন, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, সামাজিক সুবিধাদির প্রাপ্যতা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রভৃতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
হাওর অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য ঠিক রেখে টেকসই অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফি ইনফরমেশন সার্ভিস (সিইজিআইএস) এক বছরব্যাপী সমীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে।
প্রকল্পের আওতায় হাওর এলাকায় ১৭০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৯৭ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার অল সিজন (উচুঁ বাঁধ দিয়ে নির্মাণ করা সড়ক, যা সব মৌসুমে ব্যবহার করা যাবে) উপজেলা সড়ক, ২০ দশমিক ২৭ কিলোমিটার অল সিজন ইউনিয়ন সড়ক, ১৬ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার সাবমার্জিবল (বর্ষায় তলিয়ে যাবে শুষ্ক মৌসুমে যান চলাচল করবে) উপজেলা সড়ক এবং ২২ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার সাবমার্জিবল ইউনিয়ন ও গ্রাম সড়ক নির্মাণ। এ ছাড়া ১০ দশমিক ৮১ কিলোমিটার এলিভেটেড (উড়াল) সড়ক এবং ৫ হাজার ৬৮৮ মিটার দৈর্ঘ্যের ৫৭টি ব্রিজ ও ১১৮টি কালভার্ট নির্মাণ করা হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানিয়েছেন, মঙ্গলবার উড়াল সড়ক ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এই প্রকল্পটির মাধ্যমে পাশাপাশি দু’টি জেলার যোগাযোগ স্থাপিত হবে। নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জ দু’টি পাশাপাশি জেলা হলেও বছরের বেশিরভাগ সময়ই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকত।
মঙ্গলবার সকাল ১০টায় একনেক বৈঠক শুরু হয়। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানান।
এদিকে, গতকালের একনেক সভায় ‘সিলেট বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন’ (১ম সংশোধিত) প্রকল্পেরও অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
সিলেটের এই দুটি প্রকল্পের পাশাপাশি একনেকে ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯ হাজার ৩৪৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১১ হাজার ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা, ঋণ থেকে ১৮ হাজার ৯৩২ কোটি ৪ লাখ টাকা এবং বাকি অর্থ সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ১৫ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে মাতারবাড়ি আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ প্রকল্পের ১ম সংশোধনী অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এতে বর্তমানে প্রকল্পটির ব্যয় দাঁড়াল ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়ে বলেছেন, মাতারবাড়ির প্রকল্পগুলো একটি কর্তৃপক্ষের আওতায় নিয়ে আসতে। এজন্য প্রয়োজনে শুধু মাতারবাড়ির জন্য আলাদা কর্তৃপক্ষ করা লাগলেও করতে হবে।
একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলো: ‘অবকাঠামোগত পুনর্গঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির আধুনিকীকরণ’ প্রকল্প। ‘আরিচা (বরঙ্গাইল)-ঘিওর-দৌলতপুর-নাগরপুর-টাঙ্গাইল আঞ্চলিক মহাসড়ক (আর-৫০৬) যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ প্রকল্প। ‘নড়াইল শহরাংশের জাতীয় মহাসড়ক (এন-৮০৬) প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্প। ‘ইস্টাবলিশিং ডিজিটাল কানেকটিভিজ (ডিজিটাল সংযোগ স্থাপন)’ প্রকল্প। ‘রুরাল ট্রান্সপোর্ট ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্ট-২ (আরটিআইপি-২) (তৃতীয় সংশোধিত)’ প্রকল্প। ‘সিলেট বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন’ (১ম সংশোধিত) প্রকল্প। ‘হাওর এলাকায় উড়াল সড়ক ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্প। ‘খুলনা জেলার পোল্ডার নং-১৪/১ পুনর্বাসন’ প্রকল্প। ‘দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সম্প্রসারণ (কম্পোনেন্ট-১, বাপাউবো অংশ)’ প্রকল্প। ‘মাতারবাড়ি ২৬০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্ট (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প।