সিলেটে নির্বাচনী কেন্দ্রে সংঘর্ষ, ব্যালট ছিনতাই
মিলান বার্তা ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:৩৭:৩৭,অপরাহ্ন ২৯ নভেম্বর ২০২১ | সংবাদটি ১৮৪ বার পঠিতজাল ভোট, ব্যালট ছিনতাই, সংঘর্ষ ও বিচ্ছিন্ন বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে সিলেটে ইউপি নির্বাচনের ভোটগ্রহন হয়েছে। তবে বিভাগের ৭৭ ইউনিয়নের অধিকাংশই ছিলো শান্তিপূর্ণ। কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রগুলো নিস্প্রাণ দেখা গেলেও গতকালের ইউপি নির্বাচনে কিছুটা প্রাণ দেখা গেছে। তবে অনেকে বলছেন, আঞ্চলিকতার খাতিরে প্রার্থীর পক্ষে বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটাররা আগ্রহভরে এসেছেন। এ চিত্র জাতীয় বা অন্য কোন নির্বাচনে দেখা যায়না।
তৃতীয় ধাপে রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে একটানা ভোটগ্রহণ। এরপরই শুরু হয় ভোট গণনা। ভোট গণনাকালেও বিভিন্ন ইউনিয়নে উত্তেজনা হয় বলে স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোরতার কারণে এসব উত্তেজনা বড় কোন ঘটনার জন্ম দেয়নি।
৭৭টি ইউনিয়নের মধ্যে সিলেটে ১৬টি, হবিগঞ্জে ২১টি, সুনামগঞ্জে ১৭টি এবং মৌলভীবাজারে ২৩টি ইউপিতে ভোটগ্রহন হয়।
বড়লেখায় ব্যালট কেড়ে নৌকায় সিল : বড়লেখা প্রতিনিধি জানান, বড়লেখার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের নৌকার প্রার্থীর এজেন্টদের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ভোটাদের কাছ থেকে ব্যালট কেড়ে নিয়ে নৌকা প্রতীকে সিল মারার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোববার সকাল ১১টায় ওই কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা কয়েকজন ভোটার সাংবাদিকদের কাছে এই অভিযোগ করেছেন।
মনারা বেগম নামক নারী ভোটার বলেন, নৌকার এজেন্টরা আমার কাছ থেকে ব্যালট কেড়ে নিয়ে নৌকা প্রতীকে সিল মেরেছেন। আমার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারিনি। এসময় হালিমা বেগম নামক আরেক ভোটার এরকম অভিযোগ করেন।
দুপুর ১২টায় ওই কেন্দ্রে খায়রুন নেছা ও রেহানা বেগম নামক দুই নারী ভোটার অভিযোগ করেন, তাদের কাছ থেকে ব্যালেট নিয়ে নৌকায় সিল মারার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে তাদের প্রতিবাদের কারণে তারা (নৌকার এজেন্টরা) ব্যালট ফিরিয়ে দিয়েছে। তারা জানান, ওই কেন্দ্রে নারীদের কাছ থেকে ব্যালট নিয়ে নৌকায় সিল মারা হচ্ছে। কেউ ভয়ে কিচ্ছু বলেনি।
স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল কুদ্দুস স্বপনের (আনারস) প্রধান এজেন্ট আব্দুল বাছিত শামীম বলেন, কেন্দ্রের ভেতরে কয়েকজন ভোটারের কাছ থেকে ব্যালট নিয়ে নৌকায় সিল মারা হচ্ছে। অভিযোগ করেও কোনো সমাধান পাইনি।
অপর স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী (ঘোড়া) সাহাব উদ্দিন অভিযোগ করে সাংবাদিকদের বলেন, আমার এজেন্টদের বের করে দিয়ে জোরপুর্বক নারী ভোটারদের কাছ থেকে ব্যালট কেড়ে নৌকায় সিল মারা হয়। আমি কারো সহায়তা পাইনি, অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে।
মোহাম্মদনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার শ্রীবাস রঞ্জন দাস জানান, এখানে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে, কোনো সমস্যা হয়নি। নৌকার এজেন্টরা জোরপূর্বক ভোটারদের কাছ থেকে ব্যালট নিয়ে সিল মারার বিষয়টি সত্য নয় বলে তিনি দাবী করেন।
সুনামগঞ্জের সুরমা ইউনিয়নে সংঘর্ষ : স্থানীয় সূত্র জানায়, সুনামগঞ্জের সুরমা ইউনিয়নের বালিকান্দি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৩ জন আহত হয়েছেন। রোববার সকাল ১০ টায় এই ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষের সময় একঘণ্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন হয়। ঘণ্টাখানেক পর পরিস্থিতি শান্ত হলে পুনরায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সুরমা ইউনিয়নের বালিকান্দি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণকালে আওয়ামীলীগ প্রার্থী মো. আব্দুস ছাত্তার ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী সিরাজ মিয়ার সমর্থকদের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এসময় ভোটাররা দৌড়াদৌড়ি শুরু করলে ভোট গ্রহণ স্থগিত ঘোষণা করা হয়। পরে র্যাব, পুলিশ ও বিজিবি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে, সকাল সাড়ে ৮টায় সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোগলবাজার ইউনিয়নের পূর্বভাগ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে কেন্দ্রটিতে নারী ভোটাররা দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে ভোট দিচ্ছেন। দীর্ঘ সারিতে বৃদ্ধা থেকে শুরু করে নানা বয়সের নারী ভোটাররা রয়েছেন।
এই কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা ৭০ বছরের বৃদ্ধা সমতেরা বিবি বলেন, মেম্বার প্রার্থীরা বার বার বাড়িতে গিয়ে আগে আগে ভোট দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। তাই কিছুটা শীত উপেক্ষা করে ভোট দিতে আসলাম। একই চিত্র দেখা গেছে জালালপুর ইউনিয়নে।
সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফয়সল কাদির জানান, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সিলেটে।
সিলেট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শুকুর মাহমুদ জানান, নির্বাচন কমিশন নির্দেশিত ছক অনুযায়ী ভোটকেন্দ্র ছাড়াও নির্বাচনী এলাকায় পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসার বাহিনীর মোবাইল এবং স্ট্রাইকিং ফোর্স দায়িত্ব পালন করেছে।