পা দিয়ে লিখে পরীক্ষা, স্বপ্ন শিক্ষক হওয়ার

মিলান বার্তা ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:৪৪:৫৬,অপরাহ্ন ২৫ ডিসেম্বর ২০২১ | সংবাদটি ৭৮২ বার পঠিতনওগাঁর পত্নীতলায় নজিপুর সরকারি কলেজ কেন্দ্রে পা দিয়ে লিখে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সম্পন্ন বিশেষ শিক্ষার্থী জনয়িকা রানী। জনয়িকা রানী জেলার মহাদেবপুর উপজেলার গাহলী দেওরা গ্রামের হরেন্দ্র বর্মণ ও বুলবুলি রানীর মেয়ে। জনিকা তাদের সাংসারের বড় মেয়ে। এছাড়াও বঙ্কিম ও লিমন নামে তাদের দুই ছেলে সন্তান আছে।
জন্ম থেকেই জনয়িকার দুটি হাত থাকলেও তা অকেজো। এ নিয়ে পরিবারের সদস্যরা হতাশ হলেও ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ার প্রতি প্রবল ইচ্ছা ছিল জনিকা রানীর। বিষয়টি নজরে আসে তার অভিভাবকদের। প্রাথমিক সমাপনী, জুনিয়র সার্টিফিকেট পরীক্ষাতে ভালো ফল করেন তিনি। স্থানীয় গাহলী দ্বি মুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পিএসসি পরীক্ষায় ২.৮৩ এসএসসি পরীক্ষাতে জিপিএ-৪.৫৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এর পর ভর্তি হয় পত্নীতলার চৌরাট শিবপুর বরেন্দ্র ডিগ্রি কলেজে। যার ধারাবাহিকতায় নজিপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে জনিকা।
কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, জনিকা একটি কক্ষে অন্য শিক্ষার্থীদের পাশেই মেঝেতে একটি বিছানার ওপর বসে ডান পায়ের আঙুল দিয়ে লিখে পরীক্ষা দিচ্ছে। ঐ পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জনিকা যাতে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পারে সে বিষয়ে তারা বিশেষ দেখভাল করছেন।
চৌরাট শিবপুর কলেজের অধ্যক্ষ দিপক কুমার জানান, জনয়িকা খুব মেধাবী ছাত্রী। নিয়মিত ক্লাস করে। ক্লাস পরীক্ষার ফল ছিল সন্তোষজনক। আশা করছি সে এইচ এস সি পরীক্ষাতে ভাল ফলাফল করবে।
জনিকার বাবা হরেন্দ্র বর্মন বলেন, মেয়েটাকে নিয়ে আমাদের অনেক কষ্ট হয়, ওর মা তার দেখাশোনা করে। মেয়েটার পড়ার প্রতি খুব আগ্রহ, সে উচ্চতর পড়াশুনা শেষ করে সরকারি চাকরি করতে চায়।
জনিকার মা বুলবুলি রানী বলেন, জনিকা আমাদের বড় সন্তান; জন্ম থেকেই তার সবকিছুর দেখভাল করছি আমি। অনেক চিকিৎসা করেও মেয়েটির অবস্থা স্বাভাবিক হয়নি। মেয়েকে নিয়ে অনেক দুঃশ্চিন্তা হয়, তার ভবিষ্যৎ কি হবে!
তিনি বলেন, আমি মারা গেলে কে তাকে দেখবে! প্রাধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন, তিনি যদি আমার মেয়েটিকে একটি সরকারি চাকরি দিতেন ওর একটা গতি হতো, তাহলে আমি মরে গিয়েও শান্তি পেতাম। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে বাধা নয় বরং শক্তিতে রুপান্তরিত করে একদিন জনিকা রানী দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাগ্রহণ শেষে রাষ্ট্রের কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করবে, এমনটাই প্রত্যাশা করেন জনিকার পরিবার, শিক্ষকসহ এলাকাবাসী। আর এজন্য সমাজের বিত্তবান মানুষসহ সরকারের সহযোগিতা চান তারা।