জাল ভোট. সংঘর্ষ ও বিচ্ছিন্ন ঘটনায় সিলেটে ভোটগ্রহন সম্পন্ন

মিলান বার্তা ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:৪৩:৫১,অপরাহ্ন ২৭ ডিসেম্বর ২০২১ | সংবাদটি ১৬৫ বার পঠিত
জাল ভোট, সংঘর্ষ, প্রভাব বিস্তার ও বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে সিলেট বিভাগের ৮২ ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত হলো নির্বাচন। গত তিন ধাপের মতোই সকালে ভোটার দেখা না গেলেও বেলা বাড়ার সাথে কেন্দ্রে কেন্দ্রে দেখা গেছে ভোটারের উপস্থিতি। তবে স্রেফ তা প্রার্থী ও আঞ্চলিকতার খাতিরে বলেই দাবী করছে বিভিন্ন সূত্র। কারণ গত দুটি জাতীয় নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির এমন চিত্র দেখা যায়নি। এছাড়া ইউপি নির্বাচনে দলীয়ভাবে বিএনপি ও জামায়াত নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় উৎসবের আবহও কম।
স্থানীয় প্রতিনিধি ও বিভিন্ন সূত্রের বরাতে জানা গেছে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন ইউনিয়নে অনিয়মের চিত্র। এর মাঝে একটি হলো সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলা ৪নং শেওলা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে দিগলবাক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ। সেখান্রে জাল ভোট দিতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ৪ কিশোরকে আটক করে। যাদের সবার বয়স ১৬ বছরের নীচে। রোববার সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে তাদেরকে আটক করার পর কেন্দ্রের একটি কক্ষে নিয়ে আটক করে রাখেন দায়িত্বরত প্রিসাইডিং অফিসার। এ সময় ফাহিম মিয়া (১৬) নামের এক কিশোরকে প্রিসাইডিং অফিসার তার কক্ষের টেবিলের নীচে কিশোরের মাথা রেখে শাস্তি দিতে দেখা যায়। তবে আটককৃত ফাহিম ছাড়া অন্যদের শাস্তি দিতে দেখা যায়নি। সেই সাথে তাদের পরিচয়ও জানাতে অনিহা প্রকাশ করেন দিগলবাক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রিসাইডিং অফিসার শাহেদুল হক।
তিনি বলেন, জাল ভোট দিতে আসার কারণে ফাহিম মিয়া নামের এক কিশোরসহ কেন্দ্র থেকে চারজন আটক করা হয়েছে। এজন্য কিশোর ফাহিমকে বেলা ১টা পর্যন্তন টেবিলের নীচে মাথা রেখে শাস্তি দেয়া হবে বলে তিনি জানান। আরও তিন কিশোরের বিষয় জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জানা যায়, সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলা ৪নং শেওলা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে দিগলবাক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রে জাল ভোট দেয়ার জন্য একই সাথে লাইনে দাঁড়ায় ফাহিমসহ তার চার সহপাঠী। ভোট কক্ষে তারা একই সাথে চারজন প্রবেশ করে। এসময় দায়িত্বরত এজেন্টসহ অন্যদের চোখে বিষয়টি ধরা পড়লে তারা সাথে সাথে তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করলে তারা কোন ভোটার আইডি দেখাতে পারেনি। এরপর কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা প্রিসাইডিং অফিসারের হাতে তাদেরকে তুলে দেয়া হয়।
এদিকে, বিয়ানীবাজার উপজেলার ৪নং শেওলা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের দিগলবাক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রে ঘটেছে ব্যতিক্রমী ঘটনা। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘরের সবকাজ শেষ করে ভোট কেন্দ্রে গিয়েছিলেন হালিমা বেগম (৫৫) নামের এক নারী। প্রায় আধঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট কক্ষে গিয়ে জানতে পারলেন তার ভোট দেয়া হয়ে গেছে। এসময় তিনি ভোট দেন নাই বলে জানালেও কোন কাজ হয়নি। কোন উপায় না পেয়ে বাড়িতে ফিরে যান ওই নারী।
এদিকে, গোলাপগঞ্জ উপজেলার ভাদেশ্বর ইউনিয়নে ভোটকেন্দ্রে মাছরাঙা টেলিভিশন ও এনটিভির সাংবাদিকদের ক্যামেরা ছিনতাই হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভাদেশ্বর ইউনিয়নের ফতেহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
সাংবাদিকদের অভিযোগের ভিত্তিতে জানা গেছে, ভাদেশ্বর ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী সেলিম উদ্দিনের সমর্থকরা বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ফতেহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জাল ভোট দিচ্ছেন খবর পেয়ে পর্যবেক্ষণে থাকা কয়েকজন সাংবাদিক সেখানে ছুটে যান। এসময় মাছরাঙা টেলিভিশনের ক্যামেরাপার্সন ও এনটিভির ক্যামেরাপার্সনের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেন জালভোট প্রদানকারীরা। এছাড়াও শারীরিকভাবে সাংবাদিকদের লাঞ্ছিত করেন তারা। এনটিভির ক্যামেরা উদ্ধার হলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের ক্যামেরা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার খাগাউড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া দুই চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হয়েছেন। নির্বাচন চলাকালে উপজেলার খাগাউড়া ইউনিয়নের গুণই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পাঁচ মিনিটের মতো ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকলেও পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি শান্ত করে।
সংঘর্ষে আহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন খাগাউড়া গ্রামের মালেক মিয়া (৪৫) ও শাহনুর (৩৫)।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, দুপুরে ভোট গ্রহণকালে উপজেলার খাগাউড়া ইউনিয়নের গুণই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহ শওকত আরেফিন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মাসুদ কোরাইশীর সমর্থকদের মধ্যে কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় পুরো কেন্দ্রে আতঙ্ক দেখা দেয়।
এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি শান্ত করতে তাদের লাঠিপেটা করে। এ ঘটনায় বেলা পৌনে ২টা থেকে ২টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত ওই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বন্ধ ছিল।
এদিকে, সুনমাগঞ্জের বিশ্বম্ভপুরে জাল ভোট দেয়ার সময়ে দুইজনকে আটক করে পুলিশে দিয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। আটককৃতরা হলেন, বিশ্বম্ভপুর উপজেলার দক্ষিণ বাদাঘাট ইউনিয়নের সিরাজপুর বাগগাঁও গ্রামের জিয়া রহমানের ছেলে নাঈম হোসেন (১৮) এবং একই গ্রামের মঞ্জুর আলীর ছেলে কামরুজ্জামান (১৯)।
দুপুরে সিরাজপুর বাগগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের একটি বুথে আটককৃত দুইজন জাল ভোট দিতে আসলে কেন্দ্রের সহকারী পুলিং এজেন্টের সন্দেহ হলে পরিদর্শন করতে আসা ম্যাজিস্ট্রিটকে বিষয়টি জানান। পরে তিনি প্রাথমিক যাচাই-বাছাই করে আটককৃত দুইজনকে পুলিশের মাধ্যমে থানা হেফাজতে পাঠান।
এদিকে, মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার মুন্সিবাজার ইউনিয়নের ইটা চা বাগান বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রায় আধা ঘন্টা দেরিতে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে।
সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও শুরু হয়েছে সাড়ে ৮টায়। এ নিয়ে সাধারণ ভোটার ও প্রার্থীদের এজেন্টরা হট্টগোল করলেও বিজিবি সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন।