ঢাকায় নয়, আলোচনা হবে সিলেটেই : শাবি শিক্ষার্থীরা

মিলান বার্তা ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:২৯:৫০,অপরাহ্ন ২২ জানুয়ারি ২০২২ | সংবাদটি ৮৭ বার পঠিতশাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতি জটিল রূপ নিয়েছে। একদিকে অনশন, বিক্ষোভ অব্যাহত রেখে অনড় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা, অন্যদিকে পদ ধরে রাখতে অনড় ভিসি। এ অবস্থায় শুক্রবার মোবাইলে কথা বলে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের ঢাকায় ডেকেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। প্রথমে রাজী হলেও ঘন্টা দুয়েকের মধ্যেই ইউটার্ন নেয় শিক্ষার্থীরা। তারা জানিয়ে দেয় আলোচনা ঢাকায় নয়, আলোচনা হবে সিলেটেই। এজন্য শিক্ষামন্ত্রীকে সিলেট এসেই আলোচনায় বসতে হবে।
শুক্রবার বেলা দেড়টার দিকে দিকে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের শাবিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করতে আসেন। তারা ভিডিও কলে শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনির সঙ্গে আন্দোলনকারীদের কথা বলিয়ে দেন। এসময় শিক্ষামন্ত্রীর আহ্বানে তাদের ৫ জন প্রতিনিধি আলোচনার জন্য ঢাকায় যাবে বলে জানিয়েছিলো শিক্ষার্থীরা। তবে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই মত পাল্টায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শিক্ষার্থীদের পক্ষে একজন মুখপাত্র জানান, শিক্ষামন্ত্রীর আলোচনার প্রস্তাবে ঢাকা যেতে রাজি হয়েছিলেন। এক ঘণ্টা সময় চেয়েছিলেন তাদের মধ্য থেকে কারা যাবে সেটি সিদ্ধান্ত নিতে। তবে পরে অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত পাল্টানো হয়। মুখপাত্র বলেন, ‘এখানে আন্দোলনকারীদের ফেলে ঢাকা যাওয়া সম্ভব না। এছাড়া অনশনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরাও আলোচনায় অংশ নিতে চায়। তাই আলোচনার জন্য শিক্ষামন্ত্রীকে সিলেট আসতে আহ্বান জানিয়েছি। কিংবা ভিডিও কলেও আলোচনা হতে পারে।’
তিনি জানান, তাদের এই সিদ্ধান্ত শিক্ষামন্ত্রীর পক্ষে আলোচনার প্রস্তাব নিয়ে যাওয়া আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেলকে জানানো হয়েছে। তিনি মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে শিক্ষার্থীদের জানাবেন।
তবে প্রতিনিধিরা আলোচনায় গেলেও অনশন চলবে বলেও জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিলো।
শিক্ষার্থীদের ইউটার্নের পর রাত ৭টার দিকে আবারো ক্যাম্পাসে যান শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। তিনি শিক্ষামন্ত্রীর আহবানে সাড়া দিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আবারো অনুরোধ করেন। শিক্ষার্থীরা এসময় তাকে আলোচনা করে জানাবে বলে জানায়। এরপর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নাদেল বলেন, শিক্ষামন্ত্রী তাদের বিমানযোগে যাওয়ার জন্য ফের অনুরোধ করেছেন। কিন্তু তবুও যদি তারা যেতে না চায় ২/১ দিনের মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী সিলেট আসবেন।
যা বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী : শিক্ষার্থীদের সাথে আলাপকালে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা চাই আমাদের সন্তানেরা ভালো থাকবে। তাদের যেনো কষ্ট না হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসও ঠিক থাকবে। আপনারাও ওখানে কষ্ট করছেন এটা দেখছি, অন্য সমস্যা হচ্ছেও, সেটাও দেখছি। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়ত্ত্বশাসনের ব্যাপার আছে। আমরা তাতে দ্রুত হস্তক্ষেপ করতে চাই না। তবে শিক্ষার্থীরাও কষ্ট পাবেন এটাও চাই না।
ফোনে আলাপকালে মন্ত্রী বলেন, সব সমস্যারই একটা সমাধান আছে। এই সমস্যারও নিশচয়ই সমাধান আছে। তবে আলোচনার মাধ্যমেই সেই সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদেও পক্ষে ৪/৫ জন যদি আসেন, শিক্ষক সমিতির নেতারা যদি আসেন তবে আমরা আলাপ করে একটা সমাধানে পৌছতেও পারবো।
এদিকে, ওই সময় শিক্ষামন্ত্রীর সাথে আলাপকালে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে সাদিয়া আফরিন বলেছিলেন, আমরা শিক্ষামন্ত্রীর সাথে আলোচনায় আগ্রহী। সন্ধ্যার আগেই আমাদের ৫ জন প্রতিনিধি ঢাকায় শিক্ষামন্ত্রীর কাছে যাবেন। আমরা আলোচনা করে কিছুক্ষণের মধ্যে ৫ জন প্রতিনিধি ঠিক করবো। আশা করছি, মন্ত্রী আমাদের দাবি মেনে নেবেন। তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর সাথে আলোচনায় গেলেও আমাদের অনশন যথারীতি চলবে।
এদিকে, অনশনকারীদের মধ্যে অসুস্থের সংখ্যা বাড়ছে। শুক্রবার রাত ৮টা পর্যন্ত ১২ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। উপাচার্য ভবনের সামনে অনশনে থাকা বাকী সবার হাতেও স্যালাইন চলছে। আর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরাও সেখানে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। ডায়াবেটিস থাকায় তাদের একজনের অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানা গেছে। হাসপাতালে ভর্তি শিক্ষার্থীদের শারীরিক অবস্থার বিষয়ে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক নাজমুল হাসান বলেন, অসুস্থদের মধ্যে কয়েকজনের অ্যাজমার সমস্যা রয়েছে। ঠান্ডা এবং খাবার না খাওয়ায় ডিহাইড্রেশনের সমস্যা হচ্ছে। এ জন্য তাঁদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধে সরকারি নির্দেশনার পরেও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার দুপুর ২টা ৩০মিনিটে এক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকদের এ কথা বলেন আন্দোলনকারীদের এক মুখপাত্র।
তিনি বলেন, ‘গত রোববার উপাচার্যের নির্দেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশী হামলার পর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়েছেন উপাচার্য। তাই কার্যত বন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়েই আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। সরকারি নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা হলেও আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো।’
এদিকে, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলনের মধ্যে ক্যাম্পাসের দেয়ালে দেয়ালে ‘ভিসি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি লেখা লিখে রেখেছে কে বা কারা। ‘ভিসি পদ ফাঁকা আছে’ লেখা এই চিকা বৃহস্পতিবার থেকে শিক্ষার্থীদের নজরে এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলছেন, আন্দোলনকারী ২৪ শিক্ষার্থীর অনশন সত্ত্বেও উপাচার্যের ‘টনক না নড়ায়’ দেয়ালে দেয়ালে এ ‘চিকা’ মেরে থাকতে পারেন কেউ।
এদিকে, উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল করেছে। মিছিলে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়। মিছিলটি উপাচার্যের বাসভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে চেতনা একাত্তর হয়ে আবার উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এসে শেষ হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। তাদের স্লোগানে মধ্যরাতে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস।
শুক্রবার রাতেও এ রিপোর্ট লেখার সময়ও শিক্ষার্থীদের অনশন চলছিলো। অন্যদিকে চলছিলো শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ।